মোঃ আশরাফুল ইসলাম.
বাংলাদেশের ইতিহাসে সলিড কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। কাতার এয়ারওয়েজে আফ্রিকার মালাওয়ের এক নারী ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনের চালানটি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন, জব্দকৃত মাদকদ্রব্যের মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
গতকাল বুধবার (২৪শে জানুয়ারী) রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো (৩৫) নামে ওই নারীকে কোকেনের চালানসহ গ্রেফতার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির উত্তর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) তানভীর মমতাজ জানান, চালানটি আফ্রিকার দেশ মালাও অথবা ইথিওপিয়া থেকে এসেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। কারণ এ পরিমাণ কোকেন চাহিদা বাংলাদেশে নেই।
তিনি বলেন, আমরা তথ্য পাই, চোরাচালানে জড়িত আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে কোকেনের একটি বিশাল চালান আফ্রিকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে একজন আফ্রিকান নাগরিকের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠাচ্ছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার এপিবিএনকে সঙ্গে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নেয়। ফ্লাইটটি থেকে নামা সব বিদেশি যাত্রীকে ফলো করা হয়। এর মধ্যে নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো নামে এক বিদেশি নারীকে বিমানবন্দরের নিচ তলায় ভিসা অন অ্যারাইভাল ডেস্কে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করতে দেখা যায়। গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় লাগেজে অবৈধ মাদক কোকেন আছে বলে স্বীকার করেন তিনি। পরে তার লাগেজের ভেতরে বিশেষভাবে রাখা ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয়।
এ কর্মকর্তা জানান, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো আফ্রিকান দেশ মালাওয়ের নাগরিক। তিনি প্রথমে মালাও থেকে ইথিওপিয়া যান। পরে ইথিওপিয়া থেকে যান দোহাতে। পরে দোহা থেকে কাতারের এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তার আবারও মালাও যাওয়ার কথা ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে সোকো জানায়, সোকো পেশায় একজন নার্স। তিনি মূলত কোকেনের এই চালানের বহনকারী। ২০২৩ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন। সে সময়ের মতো এবারও তিনি বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টসের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসেন। বাংলাদেশে আরেক বিদেশি নাগরিকের কাছে চালানটি পৌঁছে দিয়ে দেশে ফেরার কথা ছিল তার।
বাংলাদেশে সোকো কার কাছে কোকেন হস্তান্তর করতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত কয়েক জন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই কোকেন যাওয়ার কথা ছিল। আমরা একজন বিদেশিকে সন্দেহ করছি। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমরা আশা করি চক্রটিকে ধরতে পারব।
২০২৩ সালে সোকো বাংলাদেশে কোকেনের চালান নিয়ে এসেছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে এসেছিলেন। তিনি আসলে কেন এসেছিলেন সে বিষয়ে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।
কোকেনের এই আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোকেনের চালানের সঙ্গে দেশি এবং বিদেশি চক্র জড়িত আছে। এই চক্রটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।