জেলা প্রতিনিধি ( নড়াইল)
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম মুরাদুজ্জামান ও অফিস সহয়ক মোঃ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অত্র বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রধান শিক্ষক এসএম মুরাদুজ্জামান ও অফিস সহায়ক মোঃ জাকির হোসেনের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবছর অত্র বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পড়ুয়া ১০০/১৫০ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্র ডাকযোগে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা মাধ্যামিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেছে বলে জানাগেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, ২০২৪ নতুন শিক্ষা কারিকুলামের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধ আংগুল দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক স্কুল ম্যানেজিং কমিটির দোহাই দিয়ে ইচ্ছামত অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। একাধিক ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাস থেকে বাধ্যতামূলক প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে বিদ্যালয়ের মধ্যেই। সেখানে গণিত ও ইংরেজি পড়ানো হচ্ছে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিট।
বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রাইভেট পড়ানোর নিয়ম না থাকা সত্বে ও প্রধান শিক্ষক এসএম মুরাদুজ্জামান আমাদেরকে বাধ্য করাচ্ছেন বিদ্যালয়ের মধ্যেই প্রাইভেট পড়তে এবং প্রধান শিক্ষক বলেছেন প্রাইভেট পড়লে জন প্রতি ১ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক দিতে হবে। তিনি বলেন এবছর সরকার থেকে এ নিয়ম চালু করেছে।
আমরা ( ছাত্ররা)হেডস্যারের সাথে কোন বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমাদেরকে ধমকানো সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমরা স্কুলের পেছনের মাঠে খেলাধুলা করার সময় প্রধান শিক্ষক এস এম মুরাদুজ্জামান স্কুলের ওয়াশ রুমে ডুকলেই বিভিন্ন নেশা দ্রব্যের গন্ধ পাই যা, তার ডোপ টেস্ট করা হলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে। আমাদেরকে ১০/১২ দিন পড়ানো হয়েছে তার বিনিময়ে জন প্রতি এক হাজার টাকা নিয়েছেন। আমরা এই দুর্নিতিবাজ ও নেশাগ্রস্থ শিক্ষকের হাত থেকে রেহাই চাই।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, প্রাইভেট পড়ার জন্য এই শীতের সকালে ৮টায় স্কুলে আসতে হয় এবং স্কুল শেষ করে বাড়ি ফিরতে হয় বিকাল ৪টায়।এতে করে দিন দিন আমাদের শারীরিক, মানসিক অবস্থা এবং পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে ।
এদিকে অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি অন্যান্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফি বাবদ ৩ শ বা ৩ শ ৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। সেখানে লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ রশিদ ছাড়াই ৫ শত টাকা নিয়েছেন। । অত্র বিদ্যালয়ে বর্তমান ছাত্রছাত্রী রয়েছে প্রায় ১৩শ। পরীক্ষার ফি বাবদ ৫০০ শত করে টাকা নিয়ে মোট টাকা হয় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বার্ষিক পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে মোট খরচ হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। শুধু তাই নয় এবছর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোচিং করানো বাবদ দুই’শ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অথচ কোচিং করানো হয়েছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ছাত্র ছাত্রীরা স্কুল থেকে প্রসংশা পত্র, প্রত্যয়ন পত্রসহ যেকোনো প্রয়োজনে গেলে প্রয়োজনীয় ফি ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। প্রতি বছর ছাত্র ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনের সময় সমস্ত পেপার দেওয়ার পরেও ইচ্ছাকৃতভাবে তারা নামের বানানসহ ভুল করেন। পরবর্তীতে সেই ভুল সংশোধন করার জন্য স্কুলের প্রত্যয়ন আনতে গেলে অফিস সহকারী জাকির হোসেন বলেন আমি সংশোধন করে দিবো” বলে বড় অংকের টাকা দাবী করেন। যার একাধিক প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।উল্লেখ্য যে ভর্তির সময় জন্ম নিবন্ধন সহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেওয়া হয়। ক্লার্ক জাকির এই ভুল ইচ্ছাকৃত করে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকবৃন্দ বলেন, বৃহত্তর লোহাগড়া উপজেলার মধ্যে একটি স্বনামধন্য ঐতিহ্যেবাহী বিদ্যাপীঠ লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়। বর্তমানে সেই সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে কিছু অসাধু শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য। এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটি সহ গন্যমান্য ব্যাক্তিগন সঠিক তদারকী না থাকায় দিন দিন বিদ্যালয়টি দূর্নীতির অতল সাগরে তলিয়ে যাবে।আমরা এসকল অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিকার চাই।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম মুরাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং বার্ষিক পরীক্ষার ফি’ এটা ম্যানেজিং কমিটি নির্ধারণ করেছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঢাকায় আছেন ।আপনারা সভাপতির সাথে কথা বলেন।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ বদরুল আলম টিটো বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও এই স্কুলের সার্বিক বিষয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হামিদ ভূইয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি চিঠি ডাক যোগের আমার কাছে এসছে। এ ব্যাপারে আমার উর্ধতন কর্র্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।