মোঃ আশরাফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি.
পেশাজীবী সমিতি, সাংবাদিক সমিতি, ট্রাক মালিক সমিতি, শিক্ষক সমিতি কিংবা দোকান মালিক সমিতিসহ রয়েছে আরও কত সমিতি। বাংলাদেশে প্রায় সব পেশারই একটা-দুটো করে সমিতি রয়েছে। তবে অন্য রকম এক সমিতির খোঁজ মিলেছে মানিকগঞ্জে; যে সমিতির নাম ‘গরু খাওয়া সমিতি’, ‘গরু খোর কল্যাণ সমিতি’। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরকে ঘিরে জেলা জুড়েই এ রকম প্রায় পাঁচ শতাধিক সমিতি গড়ে উঠেছে।
ঈদে গরিব মানুষের মাংসের যোগান দিতে ‘গরু খাওয়া সমিতি’ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দিন দিন এ সমিতির সংখ্যাও বাড়ছে।আনেক মানুষ আছে যারা একসাথে দুই কেজি মাংসও কিনতে পারতোনা, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুড়ায় তারাও এই সমিতির মাধ্যমে ঈদের আগে বেশ পরিমান মাংস পাচ্ছে ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪০ থেকে ৮০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় এসব সমিতি। চাঁদা গুনতে হয় সপ্তাহে একশত টাকা। বছরে এক জনের জমা হয় ৫ হাজার ২০০ টাকা। বিনিময়ে ঈদুল ফিতরের আগে গোশত মেলে প্রায় ৮ থেকে ১০ কেজি।
জানা গেছে, এই সমিতি ঈদের সময় গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের গোশতের চাহিদা পূরণ করছে। সারা বছর একটু একটু করে সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন সমিতির সদস্যরা। এতে করে ঈদে গরিব পরিবারগুলো বাড়তি আনন্দ পায় এবং তাদের আর্থিক চাপও কমে যায়।
এই সমিতির সঙ্গে যুক্ত সদর উপজেলার লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতি বছরই বাড়ছে এই সমিতির সংখ্যা। প্রতিটি মাংস সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪০ থেকে ৮০ জন। প্রত্যেক সদস্য সপ্তাহে ১০০ টাকা চাঁদা জমা দেন। ঈদ উল ফিতরের সপ্তাহ খানেক আগে থেকে শুরু হয় জমা করা টাকায় গরু কেনা, তারপর জবাই করে সদস্যরা মাংস ভাগ করে নেন। তবে চামড়া বিক্রির টাকায় পরের বছরের জন্য তহবিল গঠন করে সমিতির কার্যক্রম চলে।
গরু খাওয়া সমিতির এক সদস্য বারেক মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঈদে পোলাপানগো কাপড়চোপড় কিনা টেকা শেষ অইয়া যায়। কোনোমতে তেল-সেমাই কিনি। আবার গোশত কিনুম কেমনে? যহন জানলাম সমিতি অইছে, তহন থেইক্যা সমিতিতে নাম লেহাই। অহন ঈদের আগে ৮-১০ কেজি গোশত পামু।’
আরেক সদস্য সিকিম আলী বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। ঈদ আইলে মাংস কিনার টেকা থাহে না। তাই সমিতিতে নাম দিছি। ঈদের আগে মাংস পাইছি ৮ কেজি।’
বকজুরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা শফিউল বাশার এই গরুর সমিতি করে গোশত খাওয়ার বিষয়ে বলেন, “ ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী সঞ্চয় করা যায়েজ । কেউ ব্যক্তিগত ভাবে অথবা সম্মিলিতভাবে সঞ্চয় করে গরু কিনে গোশত খেলে তাতে দোষ বা ক্ষতির কিছু নেই। কিন্তু সঞ্চয়কৃত টাকা যদি সুদে লাগানো হয় আর সেই টাকায় গরু কিনলে সেটার গোশত খাওয়া সম্পূর্ণ হারামরুপে হবে।”
শবে কদরের দিন থেকে শুরু হয় সমিতির গরু জবাইয়ের কাজ, চলে ঈদের দিন পর্যন্ত। তবে কোথাও কোথাও ২০ রোজা থেকেই গরু জবাই শুরু হয়েছে।সমিতির কারণে ঈদ উল ফিতরে এখন প্রতি ঘরে ঘরেই গরুর মাংস থাকে।