বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
পহেলা মে মানেই বঞ্চিত শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের এক অবিস্মরণীয় দিন আন্তর্জাতিক মহান শ্রমিক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সারা বিশ্ব সমাদৃত ভাবে একই যোগে বাংলাদেশ তথা খুলনাতেও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবারের মুল প্রতিপাদ্য
মালিক শ্রমিক গড়বো দেশ,
স্মার্ট হবে বাংলাদেশ।
এই স্লোগানকে সামনে রেখে খুলনা জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের যৌথ আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদার মধ্য দিয়ে আজ পহেলা মে বুধবার সকাল ৮ টায় খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয় পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেসিসি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আবদুল খালেক এবং সম্মানিত অতিথি খুলনা ২ আসনের সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষপুত্র শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল , ও খুলনা ৩ আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুনু রেজা, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ হেলাল মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, রেঞ্জ ডিআইজি মইনুল হক, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন।
এ সময় অনুষ্ঠানের প্রধান প্রধান বক্তারা ইতিহাসের লোমহর্ষক বেদনা বিধুর মহান শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের
হে মার্কেটে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বন্ধি দশায় রেখে গরম পানিও বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে।
আর তারই প্রত্যয় সে সকল শ্রমিকদের স্মৃতি চির অবিস্মরণীয় করে রাখতে সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন র্যালি বের করে সমগ্র কণ্ঠে একই স্লোগান দুনিয়ার মজদুর এক হও এক হও, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মানতে হবে মেনে নাও।
ইতিহাস সাক্ষী দেয় তদান্তনকালীন সময়ের শ্রমিকরা অকাতরে পরিশ্রম করলেও বিনিময় পেতনা উপযুক্ত পারিশ্রমিক কপালে জুটত না মাসে এমনকি বছরে একদিন ছুটি । সারা বছর পরিশ্রম করলেও বঞ্চিত থাকতে হতো বাৎসরিক উৎসব বোনাস থেকে। অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য ছুটি দিত না মালিকপক্ষ। ফলে অসংখ্য শ্রমিক বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করলেও অসহায় শ্রমিকদের আর্তনাদ সীমার মালিকদের হৃদয়ে বিন্দু পরিমাণে স্পর্শ করত না।
তাই শ্রমিকদের জীবন ছিলো কঠিন নির্মমতায় ভরা শখ আহ্লাদ বলতে কিছুই ছিলনা শ্রমিকদের জীবনে। প্রাত ভোর থেকে অনির্দিষ্ট সময় যাবৎ বিরামহীন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেত সকল শ্রমিকরা এমনকি কোনো ধরনের উৎসব আনন্দের উচ্ছাসতার উপলব্ধি টুকুও ভুলে গিয়েছিল সে সময়কার শ্রমিকরা। এমনকি সময় মতন খাবার খাওয়ার ছুটিটুকু পর্যন্ত ছিল না তাদের। কর্মক্ষেত্রে একটু কর্মের বিচ্যুতি হলেই ঘাম্রাক্ত ক্লান্ত রুগ্ন শরীরে মালিক পক্ষ চালাত ভেত্রাঘাত। অবশেষে মালিক পক্ষের সকল নির্মম অত্যাচার অকথ্য খাটুনির জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে আমেরিকার শিকাগো শহরে মে মাসের ১ তারিখে অতিষ্ঠ সকল মেহনতী শ্রমিকদের বিক্ষিপ্ত বিস্ফোরণ মুহূর্তর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে হে মার্কেটের সামনে মালিক বিরোধী প্রথম শ্রমিক আন্দোলন। আর সেই বিক্ষিপ্ত আন্দোলনের কাছে পিছু হাটতে বাধ্য হয় মালিক পক্ষ। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শ্রমিকদের ডেকে সাপ্তাহিক ছুটি আট ঘন্টা ডিউটি সহ বাৎসরিক উৎসব বোনাস ও মেডিকেল ভাতা সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দিতে বাধ্য হওয়ার পর মালিক শ্রমিক উভয় পক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে পুনরায় ফিরে এসে আন্দোলনের জয়ী শ্রমিকরা শত স্ফূর্তভাবে কর্মজীবনে ফিরে আসে আর সেদিন যে সকল শ্রমিকরা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য করে আজও পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মহান শ্রমিক দিবস পহেলা মে পালিত হয়ে আসছে।