মশিউর মিলন, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে ২৫টি মসজিদের বরাদ্ধ থেকে সাড়ে ১৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার আভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের জেনারেল রিলিফ প্রকল্পের আওতায় এসব মসজিদের নামে দুই মেট্রিক টন করে মোট ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই চাল কালোবাজারে বিক্রি করে প্রত্যেকটি মসজিদ কমিটির সভাপতিকে মাত্র ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৮ লাখ ৬৩ হাজার ৪শ ৫০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারিভাবে প্রতি মেট্রিক টন চাল ৪৯ হাজার ৭শ ৬৯ টাকা ক্রয় করা হয়েছে। ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের জেনারেল রিলিফ প্রকল্পের আওতায় বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ২৫ টি মসজিদে দুই মেট্রিক টন করে মোট ৫০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের সভাপতি করা হয় সংশ্লিষ্ট মসজিদ কমিটির সভাপতিকে।
উত্তর দিয়ারা কচুয়া ফরাজি বাড়ি জামে মসজিদের সভাপতি জাহাঙ্গীর ফরাজি বলেন, প্রায় এক মাস আগে চন্দ্রদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক আলকাচ মোল্লা ও চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলমগীর সরদার মসজিদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। কয়েকদিন আগে আলমগীর সরদার তার হাতে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বলেন, এক টন চাল মসজিদের নামে বরাদ্দ হয়েছে। সেই বাবদ এই টাকা দেওয়া হয়েছে।
চর ওয়াডেল বাজার জামে মসজিদের সভাপতি আবুল কাশেম দর্জি বলেন, যুবলীগ নেতা আলমগীর বলেছেন, উপর মহলে (পিআইও, ইউএনও, ডিসি, এমপি) খরচ দেওয়ার পর ২৫ হাজার টাকা রয়েছে। সেটাই নাকি তাকে দেওয়া হয়েছে। চরমিয়াজান জৈনপুরী জামে মসজিদের সভাপতি কামাল সিকদারও একই কথা বলেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, কতটা নৈতিক অবক্ষয় হলে মসজিদের টাকাও মানুষ আত্মসাৎ করতে দ্বিধা করে না।
কামরুল মাস্টার বাড়ি জামে মসজিদের সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, মসজিদে বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে চেয়ারম্যান সাহেব ও আলমগীর সরদার তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার আলমগীর সরদার ফোন করে ডেকে নিয়ে তার হাতে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।
দক্ষিণ চর ব্যারেট জামে মসজিদের সভাপতি ফারুক খান বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব নাকি অনেক কষ্ট করে মসজিদের নামে চাল বরাদ্দ করিয়েছেন। তবে কি পরিমাণ বরাদ্দ, তা তিনি জানেন না। গত বৃহস্পতিবার আলমগীর সরদার খেয়াঘাটে বসে তার হাতে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা আলমগীর সরদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি কাউকে বরাদ্দের কোনো টাকা দেননি। যারা প্রকল্প সভাপতি ছিলেন তারাই চাল উত্তোলন করেছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক প্রত্যেক মসজিদে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তদবির করে বরাদ্দ আনতে হয়েছে। এ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র যুবলীগ নেতা আলমগীর সরদার ঠিক করেছেন। আর বরাদ্দকৃত চালের মান ভালো ছিল না। কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব বিশ্বাস বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে মসজিদের বরাদ্দ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। উপর মহলকে টাকা দেওয়ার কথা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।