রুপম চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলা
২০১০ সালের ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেকে সেটলার বাঙালিরা পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের উপর এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়। এ হামলায় সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন বুদ্ধপুতি চাকমা ও লক্ষ্মী বিজয় চাকমা নামে দু’জন গ্রামবাসী। আহত হন ২৪ জন। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ২টি বৌদ্ধ বিহার, ১টি গীর্জা ও ২টি পাড়া কেন্দ্র(স্কুল) সহ ১১টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি। চালানো হয় ব্যাপক লুটপাট।
এ হামলার আজ (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) ১৪ বছর পূর্ণ হলেও কোন বিচার হয়নি।
নাম প্রকাশের অনিশ্চুক এক ব্যক্তি দেশ চ্যানেল বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রতিনিধির এক স্বাক্ষাতকারে বলেন ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে পালিয়ে যাওয়া পাহাড়িরা গ্রামে ফিরে আসলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাঘাইহাট বাজার থেকে একদল সেটলার বাঙালি
আবার সেখানে যান এবং পাহাড়িদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু পাহাড়িরা তাদের ঘরবাড়ি পুড়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানান।
এরপর সোয়া ১১টার দিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও সেখানে যান। ইউএনও’র আগমনের সাথে সাথে সেনাদের সাথে থাকা সেটলাররা চিৎকার দেয়। অপরদিকে পাহাড়িরাও ঘরবাড়ি পুড়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করছিলেন। এক পর্যায়ে সেনারা পাহাড়িদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালালে পাহাড়িরা ভয়ে যে যেদিকে পারে পালিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে।
সেনাদের ছোঁড়া গুলিতে বুদ্ধপুদি চাকমা ও লক্ষ্মী বিজয় চাকমা ঘটনাস্থলে নিহত হন।
সেসময় সেটলার বাঙ্গালিরা একের পর এক গ্রামে হামলা চালায় ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তারা ১১টি গ্রামের অন্তত ৫ শতাধিক বাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। ঘরবাড়ি ছাড়াও ২টি বৌদ্ধ বিহার, ১টি গীর্জা, ব্র্যাক পরিচালিত একটি স্কুল ও ইউএনডিপি পরিচালিত একটি পাড়া কেন্দ্র জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
এই হামলায় বাঘাইহাট বাজারের গাড়ি লাইনম্যান কাসেমসহ বেশ কয়েকজন এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছে স্হানীয়রা।
উক্ত হামলার বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশে ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল ও এশিয়া সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করা হয়।
কিন্তু দীর্ঘ ১৪ বছরেও বর্বরোচিত এ হামলার বিচার ও শাস্তি হয়নি হামলায় জড়িত সেনা-সেটলারদের। উপরন্তু পর্যটন কেন্দ্র, সীমান্ত সড়ক নির্মাণসহ নানাভাবে সাজেক থেকে পাহাড়ি উচ্ছেদের নতুন নতুন নীলনক্সা বাস্তবায়ন করছে সরকার।