বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো :
দীর্ঘ পাঁচ বছরের সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলনা বাশীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের রূপদান কল্পে আজ ১৩ নভেম্বর সোমবার খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার অন্যতম রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী গণতন্ত্রের মানস কন্যা দেশ উন্নয়নের চালিকাশক্তি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা আগমনের মহেন্দ্রক্ষনে সাংগঠনিক সফরে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানের অপেক্ষমান মহা জনসমুদ্রের মাঝে এসে উপস্থিত প্রায় ১০ লক্ষ নেতাকর্মী ও খুলনা বিভাগের সর্বস্তরের মানুষদের হাত নাড়িয়ে স্বাগত জানান এবং কুশল বিনিময় করেন। এদিকে দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে খুলনা পরিনত হয়েছে উৎসবের নগরীতে।
এর আগে সকাল থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী কর্তৃক বিভিন্ন দেশাত্ববোধক গানে মুখরিত ছিল সমাবেশ স্তল।
পরে ঠিক তিনটায় খুলনা সার্কিট হাউস জনসমাবেশ স্থলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হয়ে মাঠে ও আশেপাশে অলিতে গলিতে থাকা সকলকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন আমি এখান থেকে যাদের দেখতে পাচ্ছি এবং যাদের দেখতে পাচ্ছি না আপনারা অধীর অপেক্ষায় যেখানে থাকেন যত দূরে থাকেন সকলেই আমার হৃদয়ে আছেন আমার নিজের অন্তরের অন্তস্থলে আছেন।
তাই আমি এখান থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এবং প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যর শুরুতে প্রথমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছিল আমি পরম শ্রদ্ধাভরে তানাকে স্মরণ করছি এবং সাথে জাতীয় চার নেতা ও ৭১ এর ৩০ লক্ষ শহীদ ও ৩ লক্ষ বীরঙ্গনাদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। এ সময় তিনি অনেক আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন আমি অনেক ব্যথা বেদনা বুকে নিয়ে স্মরণ করি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট যেদিন আমি হারিয়েছি আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হারিয়েছি আমার মমতাময়ী মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ শেখ কামাল জামাল স্নেহের ছোট ভাই শেখ রাসেল এবং আমার একমাত্র চাচা শেখ শহীদ আবু নাসের ও শেখ কামাল ও জামালের স্ত্রীদের সহ দেশের আরো গুণী সম্পদ।
জাতির পিতা শেখ মুজিবকে স্মরণ করে তিনি আরো বলেন শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন ঘাতকের বুলেটের আঘাতে তানাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে।আজকের এই সমাবেশের মাধ্যমে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। এ সময় আমি এবং আমার ছোট বোন শেখ রেহানা সেদিন বিদেশে ছিলাম পরে ১৯৮১ সালের দেশের মানুষ আমাকে ভালোবেসে দলের সভাপতি নির্বাচিত করলে আমি আপনাদের মাঝে ফিরে আসি এবং সেদিন থেকেই আমার প্রচেষ্টায় যারা ক্ষুদার্থ পরনে বস্ত্র ছিল না গৃহ ছিলনা ভূমিহীন ছিন্নমূল মানুষদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাই এবং শোষিত বঞ্চিত একটি জাতির শিক্ষার ব্যবস্থা নেই।
তিনি এ সময় আরো বলেন এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য আমার বাবা শেখ মুজিব সারা জীবন লড়াই সংগ্রাম জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন। যে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছে। আমার একটাই লক্ষ্য এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।
প্রথম ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিলাম তখন ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল তবুও দেশকে খাদ্য সংসম্পন্ন করেছিলাম ১৬ শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পৌঁছে ছিলাম। এবং সাক্ষরতার হার ৪৫ভাগ থেকে ৬৫ দশমিক পাঁচ ভাগে উন্নতি করেছিলাম। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম যমুনা নদীর ওপর ব্রিজ রাস্তাঘাট উন্নয়ন করেছিলাম খুলনার রূপসা ব্রিজ সহ অনেক কাজ আমরা করেছিলাম। কিন্তু ২০০১ এ আমরা পুনরায় ক্ষমতা আসতে পারেনি কিন্তু ২০০৮ নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দেয় এবং আমরা সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে ২৩৩টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছিলাম আর তখন বিএনপি মাত্র ৩০ টি আসন পায় বাকি আসনগুলো অন্যান্য দল পেয়েছিল। এরপর ২০১৪ ও ১৮ তে আমরা পুনরায় জয়লাভ করি আর তারই কারণে ধারাবাহিক গণতন্ত্র দেশে অব্যাহত আছে। আর গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান।
তিনি আরো বলেন আজ আমি আপনাদের কাছে এসেছি আপনাদের খুলনা উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি এবং আজকেও এখানে এসে অনেকগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করলাম এই প্রকল্প গুলো আপনাদের জন্য উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছি। এগুলো আমি আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম তাছাড়া এর আগে উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে উপহার দিয়েছি আধুনিক পুলিশ সুপারের কার্যালয় বাসভবন খুলনা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভবন শেখ রাসেল ইকোপার্ক ৯ টি আধুনিকায়ন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সহ বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আপনাদের উপহার দিয়েছি যা সর্বকালের স্মরণীয় প্রকল্প খুলনা বাসির জন্য। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরো বলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বিধায় দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। আর এই উন্নয়ন গণতন্ত্র ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে পুনরায় আপনাদের কাছে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা প্রদানের জন্য ভোট প্রার্থনা করছি।
পাশাপাশি তিনি আরো বলেন জামাত বিএনপি কখনো দেশের শান্তি চায়নি এরা দেশের সম্পদ লুটেপুটে বিদেশে পাচার করেছে একজন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজা ভোগ করছে আর একজন তারই সন্তান রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার মুচলেকা দিয়েও বিদেশে থেকে এদেশেরই পাচারকৃত অর্থ ভেঙে খাচ্ছে আর সেখানে বসে দেশে জ্বালাও পোড়া অগ্নিকাণ্ডের রাজনীতির ইন্ধন দিচ্ছে।
এ সময় বিশেষ বক্তাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন দেশের সড়ক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষপুত্র শেখ হেলাল, শেখ সোহেল, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিল কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, সংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক সহ আরো অনেকে।