রুপম চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি
রাঙাামটির সাজেকে ইউনিয়নের মাচলঙে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত হামলায় ইউপিডিএফের দুই সদস্য আশীষ চাকমা ও দীপায়ন চাকমা শহীদ হন।
তাঁদের দু’জনের স্মরণে আজ মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) ইউপিডিএফ বাঘাইছড়ি ইউনিট সাজেকের মাচলঙে এক স্মরণসভার আয়োজন করে।
এতে জনপ্রতিনিধি, মুরুব্বী, গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গসহ এলাকার জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেন।
স্মরণসভার পূর্বে সকাল সাড়ে ৭টায় সভাস্থলে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা।
এরপর শহীদদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হয়। এতে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ইউপিডিএফের পক্ষে সচিব চাকমা, প্রাণেশ চাকমা ও অডিট চাকমা; গণসংগঠনগুলোর পক্ষে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুণ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নিশি চাকমা ও উর্মিল চাকমা; শহীদ পরিবারের পক্ষে দীপায়ন চাকমার সহধর্মিনী এবং এলাকাবাসীর পক্ষে স্থানীয় মুরুব্বী রুপায়ন চাকমা ও অমর চান চাকমা।
পরে সকাল ১০:৪৫টায় “আমরা করবো জয়…” গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে স্মরণসভা আরম্ভ হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফ সাজেক ইউনিটের প্রধান সংগঠক অডিট চাকমা।
ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক অক্ষয় চাকমার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরো বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুণ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নিশি চাকমা, শহীদ আশীষ চাকমার ছেলে আইকন চাকমা প্রমুখ।
ইউপিডিএফ নেতা সচিব চাকমা তাঁর বক্তব্যে বলেন, জেএসএস অধিকার আদায়ের আন্দোলনের কথা বলে জাতি ও জনগণের সাথে বেঈমানি করে ১৯৯৭ সালে সরকারের সাথে আপোষ চুক্তি ও ’৯৮ সালে সরকারের কাছে স্যারেন্ডার করেছে।
এর পরপরই সন্তু লারমা ‘এক বনের এক বাঘ’ নীতিতে পানছড়িতে গণপরিষদের নেতা কুসুম প্রিয়, প্রদীপ লালদের খুন করে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত শুরু করে। যা আজো তিনি অব্যাহত রেখেছেন। আশীষ ও দীপায়নকে হত্যাও তারই অংশ।
স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা।
তিনি বলেন, অস্ত্র হাতে থাকলে রাজনৈতিক দল বলা যায় না। ডাকাতরাও অস্ত্র ব্যবহার করে। সন্তু লারমার জেএসএস, সংস্কারসহ ঠ্যাঙাড়ে মখোশরা অস্ত্র হাাতে নিয়ে আজ খুনি-জল্লাদে পরিণত হয়েছেন। তাদের মানুষ খুন করা ছাড়া আর কোন কাজই নেই।
ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ইউপিডিএফ গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কাজে-কর্মে প্রমাণ দিয়ে গর্বের সাথে বলতে পারি পাহাড়ে একমাত্র ইউপিডিএফ-ই জনগণের স্বার্থের পক্ষে কাছ করছে। ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ সর্বদা রাজপথে আন্দোলন জারি রেখেছে।
সচিব চাকমা আরো বলেন, ইউপিডিএফ যখন অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলনে নামে প্রতিক্রিয়াশীলরা তা তামাশা মনে করে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন কীভাবে করতে হয়, কেন করতে হয় স্বয়ং সন্তু লারমার কাছেও অজানা। তার সাঙ্গপাঙ্গরা এর গুরুত্ব বুঝবে কী করে?
তিনি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের বিষয়ে জেএসএসের সাথে ৭ বার বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, পাহাড়িদের সামাজিক নেতাদের দেখে মনে হয় তারা প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে এত হত্যাকাণ্ড ঘটছে, অথচ তারা নির্বিকার।
তিনি বলেন, সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা আশীষ ও দীপায়নকে হত্যা করলো, অথচ এ হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর রাষ্ট্রপতি অবকাশ যাপনে সাজেকে আসেন! আর আমাদের সমাজপতিগণ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে রাষ্ট্রপতি আসায় আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছেন।
তিনি অবিলম্বে আশীষ ও দীপায়ন চাকমার হত্যাকারী সন্তু লারমার সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।
যুব নেতা বরুণ চাকমা বলেন, সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় আশীষ ও দীপায়ন চাকমা শহীদ হয়েছেন। তাদের অবদান পার্টি ও জনগণ কখনো ভুলবে না। এ সময় তিনি শহীদ বিপুল-সুনীল-লিটন ও রুহিনকেও স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, অন্যায়কে যেমন ন্যায় বলা যায় না, তেমিন ন্যায়কেও অন্যায় দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠি জেএসএস দিয়ে ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী সৃষ্টি করে অন্যায়-অবিচার, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে। তাই সকল অন্যায়-অত্যাচা, খুন-গুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে লড়াই সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।
যারা শাসকশ্রেণীর লেজুড়বৃত্তি করে জাতির অস্তিত্ব বিলীন করছে গণজাগরণের মধ্যে দিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী নিশি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ’৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির পর পরই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সেটলারদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। তাদের দ্বারা জনগণের সম্পদ লুন্ঠন, গুম-খুন-অপহরণ, নারী ধর্ষণ, ভূমি বেদখল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে আশিষ ও দীপায়ন চাকমাসহ সাড়ে তিন শতাধিক ইউপিডিএফের নেতা-কর্মী, সমর্থককে আত্মবলিদান দিতে হয়েছে।
আশিষ চাকমার ছেলে আইকন চাকমা বলেন, আমার পিতা জাতির জন্য জীবন দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আমি গৌরববোধ করি।
তবে আমি চাই দলগুলো ভেদাভেদ ভুলে যেন সংঘাত বন্ধ করে। যাতে ভবিষ্যতে আমার মত কেউ আর পিতাহারা না হয়।